1. rebnalhost@gmail.com : admin : Camellia Open Sky School
  2. fardinahmmedsami@gmail.com : Fardin Sami :

চায়ের বালাই ব্যবস্থাপনা

পোকামাকড়ের পরিচিতি

চা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল ও রপ্তানী পণ্য। চা গাছ একটি বহুবর্ষজীবি চিরসবুজ উদ্ভিদ। চা গাছ বহুবর্ষজীবি ও একক চাষকৃত উদ্ভিদ হওয়ায় পোকা, মাকড়ের জন্য স্থায়ী গৌন আবহাওয়া ও তাদের বৃদ্ধির জন্য খাদ্য সরবরাহের একটি অন্যতম উৎস হিসেবে ভূমিকা পালন করে। চা উৎপাদনের যেসব অন্তরায় রয়েছে তাদের মধ্যে চায়ের ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ, পোকামাকড় ও কৃমিপোকা অন্যতম। বাংলদেশ চায়ে এখন পর্যন্ত ২৫ প্রজাতির পতঙ্গ, ৪ প্রজাতির মাকড় ও ১০ প্রজাতির কৃমিপোকা সনাক্ত করা হয়েছে। তন্মধ্যে আবাদী এলাকায় চায়ের মশা, উঁইপোকা ও লালমাকড় এবং নার্সারী ও অপরিনত চা আবাদীতে এফিড, জেসিড, থ্রিপস, ফ্লাসওয়ার্ম ও কৃমিপোকা মুখ্য ক্ষতিকারক কীট হিসাবে পরিচিত। অনিস্টকারী এসব পোকামাকড় বছরে গড়ে প্রায় ১০-১৫% ক্ষতি করে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে ১০০% ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এসব পোকামাকড়ের বিস্তার ও আক্রমনের তীব্রতা অনুসারে এদের মুখ্য অতবা গৌন কীট বলা হয়। তবে আজ চায়ে যে কীট মুখ্য কাল তা আবার গৌন হতে পারে। অপরদিকে কোন গৌন কীট মুখ্য কীটেও পরিনত হতে পারে। ক্ষতিকর এসব পোকামাকড়ের সঠিক দমন পদ্ধতি জানতে হলে এসব কীটপতঙ্গের সঙ্গে কিছুটা পরিচয় থাকা প্রয়োজন।

বৃহৎ অর্থে কীট বলতে সাধারনত: বিভিন্ন ধরনের পতঙ্গ, মাকড়, ইদুর, পাখী, আগাছা রোগবালাই ইত্যাদি অনিস্টকারী প্রাণি ও উদ্ভিদ বুঝায়। যে কোন ধরনের ফসল বা শস্য আবাদ করা হোক না কেন এসব ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ফসল বিনস্ট করে থাকে।

• পতঙ্গ (Insect): সাধারনত যে কীটে দু’জোড়া পাখা, তিন জোড়া পা, এবং দেহ, মাথা, বক্ষ ও উদর এ তিন অংশে বিভক্ত তাদেও পতঙ্গ বলে।
• মাকড় (Mite): সাধারনত যে কীটের জীবনেপ্রাথমিক ধাপে তিন জোড়া ও পূর্ণাঙ্গ ধাপে চার জোড়া পা, কোন পাখা থাকেনা এবং দেহকে নির্দিষ্ট অংশে বিভক্ত করা যায় না তাদেরকে মাকড় বলে।
• কৃমিপোকা (Nematode): মাটিতে বসবাসকারী অতিক্ষুদ্র, আনুবীক্ষনীক সূতা বা সেমাই আকৃতি প্রাণীকে কৃমিপোকা বলে।

চা যেহেতু বহুবর্ষজীবি ও একক চাষকৃত উদ্ভিদ তাই চায়ে আজ যে কীটপতঙ্গ গৌণ আপদ বলে পরিচিত কাল তা মুখ্য আপদ বলে বিবেচিত ও চা শিল্পের জন্য হুমকি হতে পারে। তবে যাই হোক, সমন্বিত পোকা দমন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব চা আবাদ করা সম্ভব যা এখন সময়ের দাবীও। কীটদমনের সর্বপ্রথম নীতি হলো-কীট পরিচিতি। চা আবাদীতে যে সব পোকা-মাকড়/বালাই সচরাচর আক্রমণ করে তাদের আকৃতি, প্রকৃতি ও জৈব প্রক্রিয়া ভিন্ন ধরনের। এদের আক্রমনের ফলে চা গাছের শিকড়, কান্ড, শাখা-প্রশাখা, পাতা পল্লব এবং বিভিন্ন অংশে ভিন্ন ধরনের লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দেয়। এসব লক্ষণ বা উপসর্গ সনাক্ত করে পোকামাকড়/আপদ-বালাই পরোক্ষভাবে চিনতে পারা যায়।

আক্রান্ত গাছে আপদলক্ষণ/উপসর্গ:

• চা গাছে পরিপক্ক পাতার উপরিভাগ তামাটে রং হয়। পাতার মধ্যশিরায় লাল/বাদামী রং এর ছোট ছোট চিহ্ন দেখা যায়। পাতা বিবর্ণ ও শুষ্ক দেখায়। ক্রমে আক্রান্ত গাছের পাতা ঝরে যায়- লালমাকড়

• কচি পাতা হলুদ রং ধারন করে। পাতার কিনারা রৌদ্রে ঝলসানোর মতো দেখায় এবং পাতা কুকড়ে নৌকাকৃতি হয়-জেসিড

• পরিপক্ক পাতার মধ্যশিরার পাশ দিয়ে দুটি নীলাভ সমান্তরাল রেখা দেখা যায়। পাতার উপর সাদা রং এর ছোট ছোট ক্ষতচিহ্ন দেখা যায়- থ্রিপ্স

• কচি /পরিনত পাতা কিনারা থেকে এবরো থেবরো খাওয়ার চিহ্ন দেখা যায়। আক্রান্ত গাছের পাতা সম্পূর্ণ বিনস্ট হয়ে যায়-লুপার ক্যাটারপিলার

• কচি কিশলয় এর পাতা কোকরানো ও বিকৃত হয়। কালচে রং এর ছোট পোকা একত্রে গাদি হয়ে থাকে এবং সময়ে সময়ে কাল পিপড়ার আনাগোনা দেখা যায়-এফিড

• চায়ের ফ্লাশ অর্থাৎ দুটি পাতা ও কুড়িঁতে বাদামী রং এর ছোট ছোট ফোটা বা ক্ষত চিহ্ন দেখা দেয়। কচি পাতা বিবর্ণ হয়। কিশলয় কোকড়ানো এবং ডগা থেকে রস বাহির হয়। ফ্লাশের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়- হেলোপেল্টিস বা চায়ের মশা

• চায়ের ফ্লাশ একত্রে জড়িয়ে চোংগারমত গুটানো থাকে। বিবর্ণ ও বিকৃত চোংগার মধ্যে লেদা পোকা দেখা যায়- ফ্লাশওয়ার্ম

• পরিনত পাতার কিনারা থেকে গুটানো থাকে। পাতার উপরে কামড়ের বা ফুটা করে খাওয়ার চিহ্ন থাকে-লিফরোলার

• চা গাছের কান্ড, শাখা-প্রশাখায় মাটির সুড়ঙ্গ পথ ভুমি থেকে উপরে উঠতে দেখা যায়। গাছের বাকল ও মজ্জাধিয়ে অন্ত:সার শূন্য দেখা যায়- উঁইপোকা

• চা নার্সারী বা নতুন আবাদীতে কর্তিত চারা গাছ কেটে পড়ে থাকে। কাটা কিশলয়ে দেয়া ঢাকা মাটির গর্ত দেখা যায়। রাত্রিতে ঝিঝি ডাক শোনা যায়- উরচুঙ্গা

• চা অঙ্গজ-বিস্তার নার্সারীতে চারা মারা যায়। গাছের বাড়ন কমে যায়। পাতা বিবর্ণ, শুষ্ক ও হলুদ রং ধারণ করে। শিকড় জলাসিক্ত ও স্ফিত হতে পারে-নিমাটোড বা কৃমিপোকা

চায়ের মুখ্য ক্ষতিকারক পোকামাকড়সমূহঃ

১) চায়ের মশা

ক্ষতির প্রকৃতিঃ

চায়ের মশা একটি গুরুত্বপূর্ণ কীট। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, শ্রীলংকা, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, এবং আফ্রিকাতেও বিস্তৃত। চা ছাড়াও এটি কফি, কোকোয়া এবং কাজুবাদামের একটি গুরুত্বপূর্ণ কীট। চা বাগানে এটি টি-হেলোপেলটিস বা চায়ের মশা নামে পরিচিত। চায়ের এ শোষক পোকাটির পুরুষ ও স্ত্রী পোকার নিম্ফ ও পূর্ণাঙ্গ পতঙ্গ চায়ের কচি ডগা ও পাতার রস শোষণ করে এবং আক্রান্ত অংশ কালো হয়ে যায়। ব্যাপক আক্রমণে নতুন পাতা গজানো বন্ধ হয়ে যায়। এ পোকার আক্রমণে ১৫% শস্যক্ষতি হয়ে থাকে। তবে এদের আক্রমণ সকালে ও বিকেলে তীব্রতর থাকে। মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া তাদের বংশবৃদ্ধিকে আরও ত্বরান্বিত করে। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের প্রায় সব বাগানেই এ পোকার প্রাদুর্ভাব খুব বেশি দেখা যায়। চট্টগ্রামের চা বাগানগুলিতে এ পোকার আবির্ভাব খুব একটা নাই বললেই চলে। তবে পঞ্চগড় অঞ্চলের চা বাগানগুলিতে এ পোকার আক্রমণ পরিলক্ষিত হয়।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

• হেলোপেলটিস প্রতিরোধী জাত/ক্লোন ব্যবহার করে হবে। বিটি ১, বিটি ২, বিটি ৫, বিটি ৬, বিটি ১১ ও বিটি ১৩ জাতের ক্লোন হেলোপেলটিসের প্রতি যথেষ্ট সংবেদনশীল। বিটি ৮ জাতের ক্লোনটি তুলনামূলকভাবে কম সংবেদনশীল।

• হেলোপেলটিস আক্রান্ত সেকশনের ছায়াপ্রদানকারী গাছ সমূহের ডালপালা ছেঁটে দিতে হবে যাতে সেকশনে পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে।

• বিকল্প পোষক সমূহ যেমনঃ মিকানিয়া, সিনকোনা, কোকোয়া, পেয়ারা, কাঁঠাল, আম, মিস্টি আলু, রঙ্গন ইত্যাদি গাছ অপসারন করতে হবে। ও সেকশন অবশ্যই আগাছামুক্ত রাখতে হবে।

• প্লাকিং রাউন্ড অবশ্যই ৭-৮ দিন অনুসরণ করতে হবে।

• সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ জৈব বালাইনাশক যেমন- নিম, মেহগিনি, বিষকাটালী, ভাট, ধুতুরা, ল্যান্টানা, ঘাঘরা ইত্যাদি গাছের নির্যাশ ব্যবহার করে চায়ের মশা দমন করা যায়।

• শুষ্ক মৌসুমে হেক্টর প্রতি ২.২৫ লি. হারে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি ৫০০ লি. পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে স্প্রে অবশ্যই প্লাকিং এর পরের দিন করতে হবে।
বর্ষা মৌসুমে হেক্টর প্রতি ৫০০ মি.লি. হারে রিপকর্ড ১০ ইসি অথবা এক্সিস ১০ ইসি অথবা রাইনেট ৪৫ ইসি অথবা ডেসিস ২.৫ ইসি অথবা ৩৭৫ মি.লি. হারে ক্যালিপ্সু ২৪০ এসসি অথবা ১৫০ গ্রাম হারে রেনোভা ২৫ ইসি অথবা ১৫০ মিলি হারে শেংলি ৩০ এসসি অথবা ২৫০ গ্রাম হারে তুন্দ্রা ২০ এসপি ৫০০ লি. পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে। ২য় রাউন্ড অবশ্যই ৭ দিনের মাথায় স্প্রে করতে হবে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চায়ের মশা দমনে ব্যারিয়ার স্প্রেয়িং খুবই ফলপ্রসূ।

২) লাল মাকড়

ক্ষতির প্রকৃতিঃ চায়ের লাল মাকড় খুবই অনিস্টকারী। আকারে অতি ক্ষুদ্র। পরিনত পাতার উপর ও নীচ থেকে আক্রমন করে থাকে। রস শোষনের ফলে পাতার উভয় দিক তাম্রবর্ন ধারন করে এবং শুষ্ক ও বিবর্ন দেখায়। উপোর্যপুরি আক্রমনে সম্পূর্ন পাতা ঝরে যায় ও কিশলয় ক্ষীণ বা লিকলিকে হয়।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

লাল মাকড় আক্রান্ত অপরিণত সেকশনের আশেপাশে বিকল্প পোষক গাঁদা ফুল গাছ ফাঁদ হিসাবে লাগিয়ে আক্রমন কমানো যায়।
সেকশন অবশ্যই আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
আক্রান্ত সেকশনে ছায়াপ্রদানকারী গাছ লাগাতে হবে।
গবাদি পশুর বিচরন বন্ধ করতে হবে।
রাস্তার পাশের বুশসমুহের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
অ্যামোনিয়াম সালফেট, ফসফেট ও পটাশ সার মাকড় দমনে সহায়ক।
সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ জৈব বালাইনাশক যেমন- নিম, মেহগিনি, বিষকাটালী, ভাট, ধুতুরা, ল্যান্টানা, ঘাঘরা ইত্যাদি গাছের নির্যাশ ব্যবহার করে চায়ের লাল মাকড় দমন করা যায়।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসাবে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে হেক্টর প্রতি ২.২৫ কেজি হারে সালফার ৮০ ডব্লিউ পি ১০০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫-৬ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে। তবে সালফার জাতীয় মাকড়নাশক পড়ন্ত বিকেলে স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা হিসাবে হেক্টর প্রতি ১.০০ লিটার হারে ওমাইট ৫৭ ইসি অথবা জিরোমাইট ৪০ ইসি অথবা ৬০০ মিলি হারে ম্যাজিস্টার ১০ ইসি অথবা ৫০০ মিলি হারে মাইট স্ক্যাভেঞ্জার ১০ ইসি অথবা ৪০০ মিলি হারে ওবেরন ২৪০ এসসি ১০০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৬-৭ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে।
লাল মাকড় আক্রান্ত সেকশনে সিনথেটিক পাইরিথ্রয়েড জাতীয় কীটনাশক ব্যবহারে বিরত থাকুন কারন সিনথেটিক পাইরিথ্রয়েড লাল মাকড়ের প্রজনন ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

৩) থ্রিপস

ক্ষতির প্রকৃতিঃ থ্রিপ্স অতি ক্ষুদ্র বাদামী রংয়ের পোকা । নার্সারী ও অপরিনত চায়ের অন্যতম অনিষ্টকারী কীট। নার্সারী ও স্কিফ এলাকায় আক্রমন বেশী পরিলক্ষিত হয়। আবাদী এলাকায় ছাঁটাই উত্তর নতুন কিশলয়ে আক্রমন পরিলক্ষিত হয়। রস শোষণের ফলে পাতার উপরিভাগের মধ্যশিরার দু’পাশ্বে দুটি লম্বা শোষণ রেখা দেখা যায়।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

আক্রান্ত সেকশনে পর্যাপ্ত ছায়াপ্রদানকারী গাছ লাগাতে হবে।
সেকশন অবশ্যই আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
বায়োকন্ট্রল এজেন্ট হিসেবে লেডি বার্ড বিটল ও মাকড়শা ব্যবহার করেও থ্রিপ্স দমন করা যায়।
আবাদীতে প্লাকিং রাউন্ড অবশ্যই ৭-৮ দিন অনুসরণ করতে হবে।
হেক্টর প্রতি ১.০ লি. হারে ইন্টাপ্রিড ১০ এসসি অথবা কুইনালফস ২৫ ইসি অথবা ইমিডাক্লোপ্রিড ২০ এসএল ২৫০ মিলি হারে ৫০০ লি. পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন অন্তর ২ বার স্প্রে করতে হবে। কচি ডগা ও কচি পাতার নিচে স্প্রে করতে হবে।

৪) লুপার ক্যাটারপিলার

ক্ষতির প্রকৃতিঃ লুপার ক্যাটারপিলার চা আবাদীতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পাতা খেকো পোকা যা মারাত্মক শস্যক্ষতি করে থাকে। লুপার ক্যাটারপিলার মথের অপরিণত দশা (ক্যাটারপিলার)। ইহা চা গাছ ছাড়াও ছায়া তরু ও সবুজ শস্যের একটি ক্ষতিকারক কীট। এ পোকার অপরিণত দশাই চা গাছের পাতা ও কুড়ি খেয়ে ফেলে। অপরিনত ক্যাটারপিলার কচি পাতার কিনারা ছিদ্র করে এবং পরে কিনারা বরাবর খেতে থাকে। এটি আকারে যত বড় হতে থাকে পাতা খাওয়ার পরিমানও তত বাড়তে থাকে। এক সময় মধ্যশিরা বাদে সম্পূর্ণ পাতাই খেয়ে ফেলে। পূর্ণ বয়স্ক ক্যাটারপিলার পরিনত পাতা খেতে শুরু করে এবং আক্রমন ব্যাপক হলে পুরো গাছটি পাতাবিহীন হয়ে পড়ে। পূর্বে ইহা বাংলাদেশের চায়ের মুখ্য ক্ষতিকারক পোকা ছিল না। বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের কিছু চা বাগানে ১৯৬৩ সালে এ পোকার ব্যাপক আক্রমন দেখা দিয়েছিল। পরবর্তীতে ভ্যালি সার্কেলগুলোর বিভিন্ন চা বাগানে প্রায়ই বিক্ষিপ্তভাবে এ কীটের আক্রমন দেখা যেত। সম্প্রতি অনেক চা বাগানে লুপার ক্যাটারপিলারের আক্রমন ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে পূর্বে যেখানে এ পোকাটি অজ্ঞাত ছিল। বর্তমানে দিনারপুর চা বাগান, বৃন্দাবন চা বাগান, জংগলবাড়ী চা বাগান, জেরিন চা বাগান এবং পঞ্চগড়ের স্যালিলান চা বাগানে লুপার ক্যাটারপিলারের মারাত্মক আক্রমন দেখা যায়। অনুমিত হচ্ছে ভবিষ্যতে চা শিল্পের জন্য এটি মুখ্য ক্ষতিকারক কীট হিসেবে গন্য হতে পারে। এদের প্রধান বৈশিষ্ট্য চলার সময় লুপ তৈরী করে চলে। পোকটি বহুভোজী। ছায়াতরু যেমন-বগামেডুলা, সাদা কড়ই, শীল কড়ই, কালো কড়ই, শিরীষ, কালো শিরীষ, ডেরিস, জারুল, অড়হর, কাঠ বাদাম এবং প্রায়োট্রপিস নামক সবুজ শস্য লুপার ক্যাটারপিলারের বিকল্প পোষক হিসেবে কাজ করে।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

হাত বাছাইঃ লুপার দমনে হাত বাছাই উত্তম পদ্ধতি। আক্রমন কম হলে ক্যাটারপিলার হাত দিযে সংগ্রহ করে মেরে ফেলা যায়। শীতকালে প্রুনিং সময়ে বিশেষকরে যেসমস্ত সেকশন ফর্কিং করা হয় সেখান থেকে কোকুন সংগ্রহ করা যেতে পারে।
পূর্ণাঙ্গ মথ ধ্বংস করাঃ উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে অর্থাৎ র্ফেরুয়ারী-মার্চ মাসের দিকে পূর্ণাঙ্গ মথ চা গাছ, ছায়া গাছ বা চা এলাকা সংলগ্ন অন্যান্য গাছ বিশেষ করে বাঁশ ঝাড়ে পাখা প্রসারিত করে বিশ্রামরত অবস্থায় থাকে। এরূপ মথের উপস্থিতি দেখা গেলে এ সময় বাঁশের মাথায় ঝাড়– বেধে পিটিয়ে এদেরকে মারা যেতে পারে।
ফাঁদ ব্যবহারঃ হলুদ ফাঁদ ক্যাটারপিলারের মথকে অকৃষ্ট করে থাকে। তাই হলুদ ফাঁদ ব্যবহার করে পূর্ণাঙ্গ মথ দমন করা যায়। ফ্লোরোসেন্ট আলোক ফাঁদ ব্যবহার করেও এ মথ দমন করা যেতে পারে। পূর্ণাঙ্গ মথ পরিস্ফোটনরে মৌসুমে এগুলোকে সেট করা যেতে পারে। এই ফাঁদগুলো পোকার উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং দমনের মাধ্যম হিসেবে খুবই উপকারী।
বিকল্প পোষক কমানোঃ লুপার ক্যাটারপিলারের বিকল্প পোষক যেমন ছায়াগাছ যেমন- বগামেডুলা, সাদা কড়ই, শীল কড়ই, কালো কড়ই, শিরীষ, কালো শিরীষ, ডেরিস, জারুল, অড়হর, কাঠ বাদাম এবং অপরিণত চায়ে রোপনকৃত প্রায়োট্রপিস নামক সবুজ শস্য থাকলে সেখানে নজর দিতে হবে।
রাসায়নিক দমনঃ রাসায়নিক স্প্রে অপরিণত ক্যাটারপিলার দমনে বেশ কার্যকরী কিন্তু পরিণত ক্যাটারপিলার দমনে তেমন কার্যকরী নয়। আক্রমন বেশী হলে ৫০০ মিলি হারে রিপকর্ড ১০ ইসি অথবা ৫০০ মিলি হারে ডেসিস ২.৫ ইসি অথবা ২.২৫ লি হারে ডাইমেথিয়ন ৪০ ইসি অথবা ৫০০ মিলি হারে কুইনালফস ২৫ ইসি ৫০০ লি. পানিতে মিশিয়ে সম্পূর্ণ গাছ ও মাটিতে সিঞ্চন করতে হবে। সিঞ্চন অবশ্যই পড়ন্ত বিকেলে করা উচিত। তবে সন্তোষজনক দমনের জন্য ৭ দিনের মধ্যে অবশ্যই ২য় দফা সিঞ্চন করা বাঞ্চনীয়। চা গাছের উপরের এবং মাঝের ক্যানোপির কচি ও পরিণত পাতায় সিঞ্চন করতে হবে। অবশ্যই পাতা চয়নের পর পরই সিঞ্চন করতে হবে।

৫) এফিড

ক্ষতির প্রকৃতিঃ এদেরকে জাবপোকাও বলা হয়। নার্সারী ও অপরিনত চায়ের অন্যতম অনিষ্টকারী কীট। আবাদী এলাকায় ছাঁটাই উত্তর নতুন কিশলয়ে আক্রমন পরিলক্ষিত হয়। দলবদ্ধভাবে বিভিন্ন বয়সের এফিড চায়ের কচি ডগা ও কচি পাতার রস শুষে নেয়। তাই বৃদ্ধি ব্যহত হয়। এদের অবস্থানের পাশাপাশি কালো পিপড়া দেখা যায়। ডিসেম্বর-মার্চ মাস পর্যন্ত আক্রমন তীব্র থাকে।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

নার্সারীতে হাত বাছাই উত্তম পদ্ধতি।
আবাদীতে প্লাকিং রাউন্ড অবশ্যই ৭-৮ দিন অনুসরণ করতে হবে।
বায়োকন্ট্রল এজেন্ট হিসেবে লেডি বার্ড বিটল ব্যবহার করেও এফিড কমানো যায়।
হেক্টর প্রতি ৫০০ মি.লি. হারে রিপকর্ড ১০ ইসি ৫০০ লি. পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে। তবে কচি ডগা ও কচি পাতার নিচে স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

৬) জেসিড

ক্ষতির প্রকৃতিঃ নার্সারী ও অপরিনত চায়ের অন্যতম অনিষ্টকারী কীট। আবাদী এলাকায় ছাঁটাই উত্তর নতুন কিশলয়ে আক্রমন পরিলক্ষিত হয়। এরা চায়ের পাতার রস শুষে নেয়। আক্রান্ত পাতা নৌকাকৃতি ধারন করে ও কিনারা শুকিয়ে যায়।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

আক্রান্ত সেকশনে পর্যাপ্ত ছায়াপ্রদানকারী গাছ লাগাতে হবে।
সেকশন অবশ্যই আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
প্লাকিং রাউন্ড অবশ্যই ৭-৮ দিন অনুসরণ করতে হবে।
হেক্টরপ্রতি ১.৫ লিটার হারে ৫০০ মিলিলিটার হারে রিপকর্ড ১০ ইসি অথবা ৫০০ গ্রাম হারে এসাটাফ ৭৫ এসপি ৫০০ লি. পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে। কচি ডগা ও কচি পাতার নিচে স্প্রে করতে হবে।

৭) আঁশ পোকা বা স্কেল

ক্ষতির প্রকৃতিঃ বাংলাদেশের চায়ে আঁশ পোকা (scale insect) একটি উল্লেখযোগ্য কীট। এটি চা গাছ ও কড়ই প্রজাতির ছায়াগাছকে আক্রমণ করে থাকে। এমনকি তুলা, কাঁঠাল, লেবু, জাম্বুরা, পেয়ারা, গোলাপ গাছও সমানভাবে আক্রমণ করে থাকে। এ পোকা বিভিন্ন আকৃতির মোম জাতীয় আবরণ নিঃসৃত করে এবং সে আবরণের নীচে বাস করে। শোষক অঙ্গ দ্বারা গাছের রস শোষণ করে খায়। চা বাগানে আঁশ পোকার অসংখ্য প্রজাতি রয়েছে। আঁশ পোকাগুলো ক্ষুদ্রাকৃতির। কচি কান্ডে বা পাতার নিচের দিকে মধ্য শিরা বরাবর ঝাঁকবেধে বাস করে। পরিণত স্ত্রী পোকাগুলো ডিম্বাকার, সচরাচর উত্তল, মাছের আঁশের মতো। আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে এবং রাসায়নিক কীটনাশকের ক্রমব্যবহারে নির্ভরতার কারণে এ পতঙ্গটি বর্তমানে চা বাগানে মুখ্য ক্ষতিকারক কীট হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

এদের দমনে কৌশল অবলম্বন করতে হবে। যেহেতু পোকার দেহের চারিদিকে মোমজাতীয় পদার্থের আবরণ এবং অধিকাংশই পাতার নিচের দিকে অবস্থান করে তাই কীটনাশক দ্বারা এদের বিনষ্ট করা কষ্টসাধ্য। তাই এদের দমন করতে কমপক্ষে ২ রাউন্ড কন্টাক্ট ও সিস্টেমিক কীটনাশক একত্রে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। এখেত্রে হেক্টর প্রতি ১২৫ গ্রাম রেনোভা/একতারা ২৫ ডব্লিও জি (থায়ামেথোক্সাম) এবং ডেসিস ২.৫ ইসি (ডেল্টামেথ্রিন) ৫০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত অংশ ভাল করে স্প্রে করতে হবে। তবে পাতার নিচের দিকে এবং কচি কান্ডে টার্গেট পয়েন্ট নির্ধারণ করতে হবে। ৭ দিন পর ২য় রাউন্ড স্প্রে করতে হবে। জৈবিক নিয়ন্ত্রণ এবং তৈল জাতীয় পদার্থের প্রয়োগও অধিক কার্যকরী। এসব তৈল জাতীয় পদার্থ প্রয়োগে পোকার শ্বসনে ব্যাঘাত ঘটায় ও মারা যায়।

৮) ফ্লাশওয়ার্ম

ক্ষতির প্রকৃতিঃ এরা মথ জাতীয় পতঙ্গের অপরিনত দশা। দেখতে লেদা পোকার মত। দু’টি পাতা ও একটি কুঁড়িকে গুটিয়ে পাটি-সাপটার মত মোড়ক তৈরী করে। মোড়কের ভিতরে থেকে কচি কিশলয় কুড়ে কুড়ে খায়। নার্সারী ও অপরিনত চাও আবাদী এলাকায় ছাঁটাই উত্তর নতুন কিশলয়ে এ সমস্যা ব্যপক।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

হাত বাছাই উত্তম পদ্ধতি। হাত বাছাই করে মোড়ক অংশটি বিনষ্ট করলে কীড়াটি মারা যাবে।
দমনে কোন কীটনাশক ব্যবহার না করাই ভাল।

৯) উইপোকা

ক্ষতির প্রকৃতিঃ উইপোকা মৌমাছির মতো সামাজিক পতঙ্গ। চা বাগানে ‘উলুপোকা’ নামে পরিচিত। এটা চায়ের অন্যতম মুখ্য ক্ষতিকারক কীট। চা গাছের মরা-পঁচা বা জীবন্ত অংশ খায়। এরা মাটিতে ও গাছের গুঁড়িতে ঢিবি তৈরি করে বাস করে। কেবলমাত্র শ্রমিক শ্রেণিই চা গাছ খেয়ে থাকে। রানী উইপোকার ডিম পাড়ার ক্ষমতা অত্যধিক। একটি রানী উইপোকা প্রতিদিন ৮৪,০০০ করে ডিম পাড়ে। উইপোকা গাছের কান্ড বা মাটির উপরিভাগে ভিতর থেকে গলিপথ বানিয়ে চলাচল করে। কুঁড়ে কুঁড়ে চা গাছ খায়।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

উঁইপোকা প্রতিরোধী জাত/ক্লোন নির্বাচন করতে হবে। মনিপুরী বা মনিপুরী-চায়না হাইব্রিড জাত অথবা বিটি ৪, বিটি ৬, বিটি ৭ ও বিটি ৮ ক্লোন উঁইপোকা প্রতিরোধী জাত। বিটি ১০ ও বিটি ১১ ক্লোনদ্বয় উঁইপোকার প্রতি বেশ সংবেদনশীল।
তিন বছরের প্রুনিং চক্র (লাইট প্রুনিং-ডীপ স্কীফ-লাইট স্কীফ) উঁইপোকার প্রার্দুভাব কমাতে সাহায্য করে।
খাবার ফাঁদ যেমন- মরা বাঁশের খন্ড, নরম কাঠ, বগামেডুলা ব্যবহার করে উইপোকার আবির্ভাব সনাক্তকরণ ও ধ্বংস করতে হবে।
উইপোকার রানী সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে। এতে বংশবৃদ্ধি ব্যাহত হবে।
বেশ কিছু উপকারী পোকা আছে যারা উইপোকা ধরে খায়, এদের চা বাগানে সংরক্ষণ করতে হবে।
হেক্টর প্রতি ১.৫ লিটার হারে এডমায়ার ২০০ এসএল/রিজেন্ট ৫০ এসসি অথবা ১০ লিটার হারে ডার্সবান ২০ ইসি ১০০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় ভালভাবে স্প্রে করতে হবে। স্প্রে করার পূর্বে গাছের গোড়ায় হালকা ফর্কিং করে নিলে ভাল ফল পাওয়া যাবে। গাছ প্রতি ১৫০-২০০ মিলি সলিউশন ভালভাবে স্প্রে করে দিতে হবে।

১০) কৃমিপোকা

ক্ষতির প্রকৃতিঃ কৃমিপোকা নার্সারীর প্রধানতম পেষ্ট। এরা মাটিতে বাস করে। অতিক্ষুদ্র ও আণুবীক্ষণিক পোকা। দেখতে সূতা বা সেমাই আকৃতির। কচি শিকড়ের রস শোষণ করে। ফলে শিকড়ে গিট তৈরি হয়। আক্রমনে চারা দুর্বল ও রুগ্ন হয়। পাতা হলুদ ও বিবর্ণ দেখায়। চারার বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

৬০-৬৫˙সে. তাপমাত্রায় নার্সারির মাটি তাপ দিয়ে এ পোকা দমন করা যায়। এক্ষেত্রে বিটিআরআই কর্তৃক উদ্ভাবিত সয়েল স্টেরিলাইজিং যন্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে।
গাছ প্রতি ২৫০ গ্রাম হারে নিম কেক প্রয়োগ করেও ভাল পাওয়া যায়।
এছাড়া প্রতি ১ ঘনমিটার মাটিতে ফুরাডান (কারবোফুরান) ৫ জি ১৬৫ গ্রাম হারে অথবা গুলি (ফিপ্রোনিল) ৩ জিআর অথবা ৭০ গ্রাম হারে ফারটেরা (রাইনাক্সাপির) ০.৪ জি অথবা ১৫০ গ্রাম হারে রাগবী (কেডুসাফস) ১০ জি প্রয়োগ করে কৃমিপোকা দমন করা যায়।
নার্সারীর মাটিতে গুয়াতেমালা ও সাইট্রোনেলা গাছ লাগিয়ে পর্যায়ক্রমে তা লপিং করে মাটিতে নেমাটোডের সংখ্যা সন্ধিক্ষণ মাত্রার নিচে রাখা সম্ভব।

১১) উরচুঙ্গা

ক্ষতির প্রকৃতিঃ নার্সারি ও অপরিণত চা আবাদিতে উরচুঙ্গা বড় সমস্যা। মুখে শক্ত ও ধারাল দাঁত আছে। সামনের পা জোড়া খাঁজকাটা, চ্যাপ্টা কোদালের মতো। পায়ের এ অবস্থার কারণে ছোট চা-চারাকে ধরে সহজেই কেটে ফেলে। এরা নিশাচর পতঙ্গ। মাটিতে গর্ত করে থাকে এবং সন্ধ্যার পর বের হয়ে আসে।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

এটা দমনে নার্সারি ও অপরিণত চা আবাদি এলাকার উরচুঙ্গার গর্তগুলো শনাক্ত করে গর্তের মুখে দুই চা চামচ পোড়া মবিল দিয়ে চিকন নলে পানি ঢেলে দিতে হবে। উরচুঙ্গা গর্ত থেকে বের হয়ে এলে লাঠি বা পায়ের আঘাতে মেরে ফেলতে হবে।

চায়ের ক্ষতিকারক রোগবালাই ও এদের প্রতিকার ব্যবস্থা

রোগবালাই পরিচিতিঃ

সমস্ত গাছ পালা রোগ বালাই দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিংবা চারা অবস্থায়ও চা গাছ বিভিন্ন রোগ বালাই দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। সাধারণত: ছত্রাক ও শৈবাল জাতীয় জীবাণু দ্বারা চা গাছের রোগসমূহ সংঘঠিত হয়ে থাকে। রোগসমূহ কিছু সময় স্বল্প পরিসরে আবার অনেক সময় ব্যাপক আকার ধারণ করে চায়ের প্রভূত ক্ষতি সাধন করে থাকে। পোকা-মাকড়ের মত রোগের জীবাণুসমূহ খালী চোখে দেখা যায় না বিধায় সাধারণত এদের গুরুত্ব কম দেয়া হয় এবং অনেক সময় এদের ক্ষতিকর অবস্থাও নিরুপন করা হয় না। তবে সঠিক জ্ঞান থাকলে প্রতিটি রোগের আলামত (Symptom) দেখে এদের চিহ্নিত করা যায়। সঠিকভাবে আক্রান্ত রোগটি চিহ্নিত করতে পারলে তা দমন করা সহজ হয় এবং এদের ক্ষতি থেকে গাছকে বাঁচানো যায় তথা ফসলহানী থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। রোগ বালাই এর পাশাপাশি আগাছাও চা বাগানসমূহে ফসলহানী বা উৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টির ক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। রোগ বালাই ও আগাছা চা গাছের বড় শত্রু। আমাদের দেশে স্বাভাবিক অবস্থায় কেবলমাত্র রোগের কারণে প্রায় ১০-১৫% এবং আগাছার কারণে প্রায় ১০-১২% চায়ের ফলন কমে যায়। যথাসময়ে ও সঠিক পদ্ধতিতে প্রতিকারের অভাবে সম্পূর্ণ ফলনও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশ চা’য়ে ২০ টি জীবাণুঘটিত রোগ ও ৪০ প্রকার আগাছা সনাক্ত এবং লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। বছরে এক এক সময়ে এক এক রোগ-বালাই ও আগাছার প্রাদূর্ভাব পরিলক্ষিত হতে পারে। এদের প্রাদূর্ভাব বাগান হতে বাগানে, সেকশন হতে সেকশনে ভিন্নতর হতে পারে। এমনকি একই গাছের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন প্রকার রোগ-বালাই দ্বারাও আক্রান্ত হতে পারে।

(ক) চা গাছের প্রধান প্রধান রোগ-বালাইসমূহ:

সাধারণত বিভিন্ন রোগজীবাণু গাছের বিভিন্ন অঙ্গ আক্রমণ করে থাকে। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় যে সমস্ত রোগজীবাণু চা গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত বিভিন্ন অঙ্গ আক্রমণ করে রোগ সৃষ্টি করে থাকে, তাদেরকে গাছের অবস্থান ভেদে তিনভাগে ভাগ করে বিভিন্ন অংশের প্রধান প্রধান রোগ-বালাইসমূহ নিম্নে প্রদান করা হল:

পাতায় এবং গাছের অগ্রভাগের রোগ-বালাই সমূহঃ (১) গল ডিজিস বা গুটি রোগ, (২) ডাই ব্যাক বা আগা মরা রোগ, (৩) পাতা পঁচা রোগ, (৪) ব্রাউন ও গ্রে ব্লাইট এবং (৫) ফোঁসকা রোগ ইত্যাদি।

ডাল পালা এবং গাছের মধ্যভাগের রোগ-বালাই সমূহঃ (১) রেড রাষ্ট বা লাল মরিচা রোগ, (২) ব্রাঞ্চ ক্যান্কার বা ডালপালার ঘা রোগ, (৩) হর্স হেয়ার ব্লাইট এবং (৪) থ্রেড ব্লাইট রোগ ইত্যাদি

গোড়ায় এবং গাছের নিম্নভাগের রোগ-বালাই সমূহঃ (১) চারকোল ষ্টাম্প রট, (২) কলার রট, (৩) ভায়োলেট রুট রট, (৪) পারপল রুট রট ইত্যাদি

১) পাতা পচা বা ব্ল্যাক রট

লক্ষণঃ এ রোগ চা আবাদী এলাকায় পাতা চয়নতলের নিচের পরিনত পাতাসমূহে আক্রমণ করে। Corticium invisum এবং C. theae নামক ছত্রাক দ্বারা এই রোগ সংঘঠিত হয়। মে, জুন, জুলাই মাসে মাঠে এ রোগ বেশী দেখা যায়। প্রবল বায়ু প্রবাহ, বৃষ্টিপাত ও পাতা চয়নকারীদের ব্যবহৃত কাপড় এবং ঝুড়ীর মাধ্যমে এ রোগের বিস্তার লাভ করে। অত্যাধিক ছায়া, আর্দ্র ও স্যাঁতস্যতে আবহাওয়া এবং পুনিংত্তোর গাছের উপর রেখে যাওয়া পুনিং লিটার ইত্যাদি এ রোগের প্রাদুর্ভাবের জন্য সাহায়ককারী উপাদান। এ রোগের কারনে পাতাগুলো প্রথমে হালকা বাদামী রং ধারণ করে ও ক্রমশ রং পরিবর্তিত হয়ে কাল হতে থাকে। পাতার মাঝের অংশ ও কিনারা ধুসর বাদামীতে পরিণত হয়। ভেজা অবস্থায় কাল দেখা যায়। কোন কোন সময় মরা পাতা ছত্রাকের সাহায্যে ডালের সঙ্গে ঝুলে থাকে বা পাতার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে।

প্রতিকারঃ রোগের জীবাণু সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস না হলে প্রত্যেক বৎসরেই এ রোগ দেখা দিতে পারে। এরূপ অবস্থায় গাছ দুর্বল হয় এবং পাতা দেয়ার ক্ষমতা রহিত হয়। প্রতিকার হিসাবে প্রথমে রোগাক্রান্ত গাছগুলো চিহ্নিত করতে হবে। যতটুকু সম্ভব আক্রান্ত পাতাগুলো হাত দিয়ে পরিষ্কার করে হেক্টর প্রতি ৭৫০ গ্রাম নোইন ৫০ ডব্লিউ পি (কার্বেন্ডাজিম জাতীয়) অথবা ২.৮ কেজি কুপ্রাভিট ৫০ ডব্লিউ পি (কপার জাতীয়) ছত্রাক নাশক ১০০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে পুরোগাছে ভালভাবে স্প্রে করতে হবে। পুরোপুরিভাবে এ রোগের প্রতিকারকল্পে ১৫ দিন অন্তর ২/৩ বার উক্ত ওষুধ ভালভাবে প্রয়োগ করতে হবে। আক্রান্ত পাতাগুলো পুড়িয়ে বা গর্তে পুতে ফেলা বাঞ্চনীয়। প্রুনিং এর সময় প্রুনিং লিটারগুলোও সতর্কতার সহিত সরিয়ে অন্যত্র পুড়িয়ে বা গর্তে পুতে ফেলা উচিত। এ রোগাক্রান্ত এলাকায় প্রয়োজনাতিরিক্ত ছায়া গাছ পাতলা করা উচিত এবং নালা ব্যবস্থাও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পরবর্তী ২/৩ বছর এভাবে ব্যবস্থা নিলে এ রোগ সমূলে বিনাশ সাধন করা যায়।

২) ফোস্কা রোগ বা ব্লিস্টার ব্লাইট

রোগের লক্ষণঃ ছোট ছোট হালকা দাগ পরিলক্ষিত হয়। নরম ডগা ও কচি পাতায় আক্রান্ত অংশ ফুলে গিয়ে ফোঁস্কার আকার ধারণ করে। ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে ফোস্কাগুলো বাদামী এবং পরে কালো হয়ে শুকিয়ে যায়।

প্রতিকারঃ এ রোগ দমনে কপার হাইড্রক্সাইড যেমন- চ্যাম্পিয়ন ৭৭ ডব্লিউ পি ২.২৪ কেজি হারে অথবা ট্রাইডিমর্ফ যেমন- ক্যালিক্সিন ৮০ ইসি ১.১২ লিটার হারে হেক্টর প্রতি ১০০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে পাতায় স্প্রে করতে হবে।

৩) ডাই ব্যাক বা আগা মরা রোগ

রোগের লক্ষণঃ অরিণত গাছের গোড়ায় এ রোগের আক্রমণ লক্ষ্য করা যায়। আক্রমণে গাছ ঝিমিয়ে পড়ে, সত্বর পাতাগুলো বাদামী রং ধারণ করে এবং মাটির সমান্তরালে ১-২ সেমি উপরে বাকল ফেটে রিং আকারে উপরের দিকে উঠে যায়। ফলে গাছের গোড়া পেন্সিলের মতো সরু ও চিকণ হয়ে যায়।

প্রতিকারঃ এ রোগ দমনে হেক্টর প্রতি ২ লিটার হারে ফরমালডিহাইড যেমন- ফরমালিন (৪০%) অথবা ২.৮ কেজি হারে কপার অক্সিক্লোরাইড যেমন- এমিভিট ৫০ ডব্লিউপি ১০০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত গাছের গোড়ায় স্প্রে করতে হবে।

৪) হর্স হেয়ার ব্লাইট

রোগের লক্ষণঃ চা গাছের মধ্য ক্যানোপি রোগ সমূহের মধ্যে হর্স হেয়ার ব্লাইট একটি মারাত্বক রোগ। মেরাসমিয়াস ইকুইক্রিনাস (মোল) নামক ছত্রাকের আক্রমনে এই রোগ সংঘঠিত হয়। পূর্ণবর্ধিত ও বয়স্ক চা গাছের ইহা একটি সাধারণ রোগ। এই রোগ বর্ষজীবী প্রকৃতির। যদি সঠিক ভাবে এই রোগকে নিয়ন্ত্রণ করা না হয় তাহলে একই সেকশনে অথবা একই গাছে ইহা বছরের পর বছর সতেজ থাকে এবং স্থায়ীত্ব লাভ করে। রোগের তীব্রতার তারতম্যের কারণে ফসলহানির পরিমান ভিন্ন হয়। সাধারণত এই রোগের কারণে ফসল হানির পরিমান শতকরা ১৫ থেকে ১৭ ভাগ, কিন্তু রোগ বিস্তারের অনুকূল পরিবেশ বিরাজ থাকলে এই ক্ষতির পরিমান শতকরা ৩০ ভাগেরও বেশী হয়। রোগ বিস্তারের অনুকূল নিয়ামকসমূহ বিরাজমান থাকলে ব্যাপক শস্যহানি হতে পারে। সাধারনত: রোগ বিস্তারের অনুকূল নিয়ামকসমূহ হল, অত্যাধিক ছায়া, স্যাঁতস্যাতে অবস্থা, কুঞ্চি এরিয়া, অতি নিকটে বাঁশ ঝাড়ের অবস্থান, প্রুণিং এর সময় আবর্জনাসমূহ চা গাছের উপর পতিত হওযা, নিম্ন মানের নিষ্কাশন ব্যবস্থা। সাধারণতঃ জুন মাস থেকে আগস্ট মাসে যখন উষ্ণ, আর্দ্র ও স্যাঁতস্যাতে আবহাওয়া বিরাজ করে তখন এই রোগের জীবানু সক্রিয় হয়ে উঠে। এই রোগের জীবানুর বিশেষত্ব হচ্ছে যে, ইহা কোন স্পোর উৎপন্ন করে না। প্রবল বায়ু প্রবাহ, বৃষ্টির ফোটা, বাতাস বাহিত বৃষ্টির পানি, প্রুণিং লিটার, কৃষি যন্ত্রপাতি, চা পাতা চয়নকারীর ব্যবহৃত ঝুড়ি এবং কাপড় ইত্যাদির মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে। হর্স হেয়ার ব্লাইট রোগ দ্বারা সৃষ্ট রোগের লক্ষণ সমূহ সনাক্ত করা কঠিন, তবে বাহ্যিক দৃষ্টিতে আক্রান্ত চা গাছ গুলো খুব দুর্বল এবং অসতেজ মনে হয়। খুব গভীর ভাবে লক্ষ্য করলে, আক্রান্ত চা গাছের উপর আক্রমনকারী ছত্রাকের উজ্জ্বল কালো বর্ণের সূত্রক বা কর্ড দেখা যায়। যেহেতু ছত্রাকগুলোকে একত্রে হর্স হেয়ারের মত মনে হয় সে কারণে এই জীবানু দ্বারা সৃষ্ট রোগকে হর্স হেয়ার ব্লাইট রোগ বলা হয়। ছত্রাকের এই সূত্রক বা কর্ড গুলো আক্রান্ত চা গাছের কাঠামোতে ছড়ায়ে পড়ে এবং বিজড়িত করে ফেলে। ফলশ্রুতিতে, আক্রান্ত গাছের সক্রিয় সালোকসংশ্লেষণ এরিয়া হ্রাস পায়। গাছের কার্যক্ষম গভীরতা পর্যন্ত সূর্যালোক প্রবেশ করতে না পারায় সালোকসংশ্লেষণের পরিমানও কম হয়।

প্রতিকারঃ আক্রান্ত সেকশনের আশেপাশে জঙ্গল থাকলে তা পরিস্কার করা উচিত। যে সব সেকশনের অত্যাধিক ছায়া তরু অপসারণ করা সম্ভব নয়, সেগুলোর শাখা- প্রশাখা বর্ষার প্রারম্ভেই ছাঁটাই করে পাতলা করে দেয়া যেতে পারে। প্রুণিং এর পর প্রুণিং লিটার কখনই চা গাছের উপর ছড়াইয়া ছিটাইয়া রাখা উচিত নয়। আক্রান্ত সেকশনে চা গাছের উপর পতিত ছায়া তরুর পাতা, আবর্জনা, প্রুণিং এর পর আবর্জনাসহ ভিতর থেকে ফাঙ্গাল সূত্রক বা কর্ড সমূহকে অপসারণ করলে এই রোগের আক্রমনের তীব্রতা অনেকাংশে কমে যায়। যে সব সেকশনের নিষ্কাশন অবস্থা ভালো নয়, সে সব সেকশনে এই রোগের অক্রমন বেশী হয়। তাই সেকশনের ভূমির বন্ধুরতা অনুযায়ী নালা প্রতিষ্ঠা করে এবং নালার রক্ষণাক্ষেণ করে নিষ্কাশন অবস্থা উন্নত করা উচিত। হেক্টর প্রতি ১০০০ লিটার পানিতে ৭৫০ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম (এমকোজিম ৫০ ডব্লিউপি) মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রেয় করলে সুফল পাওয়া যায়।

৫) রেড রাস্ট বা লাল মরিচা রোগ

রোগের লক্ষণঃ অপ্রাপ্ত অথবা প্রাপ্ত বয়ষ্ক সব বয়সের চা গাছ এ রোগ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। Cephaleorus parasiticus নামক শৈবাল দ্বারা এই রোগ সংঘঠিত হয়। বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভর করে মধ্য মার্চ থেকে মধ্য এপ্রিলে এ রোগ দেখা যায়। অক্টোবর মাস পর্যন্ত এ রোগের প্রাদুর্ভাব পরিলক্ষিত হয়। বৃষ্টিপাত, শিশির, ঝড়োবাতাস, পাতা নড়াচড়া এবং বৃষ্টির পানি ইত্যাদির মাধ্যমে একস্থান হতে অন্যস্থানে, একগাছ হতে অন্য গাছে এ রোগ বিস্তার লাভ করে। মাটিতে প্রয়োজনীয় পরিমান সারের অভাব, জলাবদ্ধতা, অপর্যাপ্ত নালা ব্যবস্থা, অত্যাধিক আগাছা, খরা ও অপর্যাপ্ত ছায়া ব্যবস্থা এ রোগের প্রাদুর্ভাবের জন্য সহকারী। বগামেডুলা নামক অস্থায়ী ছায়া গাছও এই রোগে আক্রান্ত হয় বিধায় অন্যতম পোষক হিসাবে কাজ করে । সাধারনত: এক বছরের অধিক বয়ষ্ক ডালে এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। রোগাক্রান্ত ডাল বা কান্ডের উপর লাল / কমলা রংয়ের চুলের মত অঙ্গানু সৃস্টি হয় তখন ইহার আক্রান্ত এলাকাগুলো মরিচার মত দেখায় বিধায় এ’কে লাল মরিচা বা রেড রাস্ট বলা হয়। আক্রান্তকান্ডের পাতা গুলো হলুদ হয়ে যায়।

প্রতিকারঃ বগামেডুলা নামক অস্থায়ী ছায়া গাছ এই রোগের অন্যতম পোষক বিধায় দু’ বছর বয়সের পুর্বেই বগামেডুলা চা আবাদীতে হতে কেটে সরিয়ে ফেলা উচিত। কেননা এখান থেকে চা তে রোগটি বিস্তার লাভ করতে পারে। এ রোগ গাছকে অত্যন্ত দুর্বল করে ফেলে বিধায় পর পর কয়েক বছর কোন এলাকায় এ রোগের আক্রমণ পরিলক্ষিত হলে পরবর্তী বছর সে এলাকায় রোগ সংঘঠিত হওয়ার পূর্বে অনুকূল নিয়ামকসমূহের (ফ্যাক্টরগুলো) জরুরী ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। উক্ত এলাকায় অনুমোদিত মাত্রায় সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে। ছায়া গাছবিহীন স্থানে প্রয়োজনীয় পরিমান ছায়া গাছ রোপন করা উচিত এবং নালা ব্যবস্থা উন্নত ও পরিস্কার করে জলাবদ্ধতা দূর করতে হবে। রোগ আক্রান্ত এলাকায় হেক্টর প্রতি ২.৮ কেজি কুপ্রাভিট ৫০ ডব্লিউ পি অথবা যে কোন ৫০% কপার জাতীয় ছত্রাক নাশক ১০০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছের আগা হতে গোড়া পর্যন্ত সমস্ত ডালপালা গুলোতে ভালভাবে স্প্রে করতে হবে। সফলভাবে এ রোগ দমনার্থে ১৫ দিন অন্তর আরও ২/৩ বার উক্ত ওষুধ স্প্রে করতে হবে।

৬) স্ফীতি বা গল রোগ

লক্ষণঃ এক ধরনের ছত্রাকজনিত রোগের কারণের এ রোগ দেখা দেয়। এ রোগের আক্রমণে চা গাছের পাতার বোটা ও ডালে টিউমারের মত কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে, ফলে নতুন কান্ড সৃষ্টি ব্যহত হয়। চায়ের ফলন কমে যায়। সাধারণত বিটি১ ক্লোনের গাছে গল রোগ দেখা যায়।

প্রতিকারঃ আক্রমণ বেশি হলে আক্রান্ত সেকশন এলপি অথবা ডিএসকে করতে হবে। সেকশন থেকে প্রুনিং লিটারগুলো সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। কান্ডে টিউমারটি বড় হলে ধারালো চাকু দিয়ে কেটে কাটা স্থানে কপারের পেস্ট লাগাতে হবে। আক্রান্ত সেকশনে হেক্টর ৭৫০ গ্রাম হারে কার্বেন্ডাজিম (নোয়িন ৫০ ডব্লিউপি) অথবা ২.২৪ কেজি হারে কপার হাইড্রক্সিক্লোরাইড (চ্যাম্পিয়ন ৭৭ ডব্লিউপি) ১০০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ভালভাবে স্প্রে করতে হবে। ১৪ দিন পর ২য় রাউন্ড স্প্রে করতে হবে।

৭) ব্রাঞ্চ ক্যাংকার বা ক্ষত রোগ

রোগের লক্ষণঃ চা গাছের শাখা প্রশাখা বা মূল কান্ডে এ রোগের আক্রমণ বেশী পরিলক্ষিত হয়। আক্রান্ত অংশে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং ধীরে ধীরে ক্ষতটি বড় হতে থাকে। সব বয়সের গাছেই কমবেশী এ রোগের আক্রমণ পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে পুরানো প্রায় সকল গাছের শাখা প্রশাখা, কান্ড ও গোড়া এ রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। জীবানুটি একটি উন্ড প্যারাসাইট প্রকৃতির ছত্রাক। যে কোন ক্ষতের মাধ্যমে গাছকে আক্রমণ করে। আক্রান্ত অংশে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং ধীরে ধীরে ক্ষতটি বড় হতে থাকে। বাকলের নিচে শক্ত কাঠ আক্রান্ত হয়ে শুকিয়ে যায়। গাছের গোড়ায় এ রোগের আক্রমণ তীব্র হলে শীঘ্রই গাছ মারা যায়। তীব্র খরা, ছায়াবিহীন অবস্থা, শিলা বৃষ্টি, প্রুণিং এর সময় ক্ষত সৃষ্টি হওয়া, আগাছা দমনের সময় দা-কোদাল প্রভৃতির দ্বারা গাছের গোড়া বা কান্ডে ক্ষত সৃষ্টি হওয়া ইত্যাদি এ রোগ সংক্রমনের জন্য সহায়ক। বৃষ্টির পানি, পিপড়া, উঁইপোকা এবং প্রুণিং দা ইত্যাদির মাধ্যমে এ রোগের জীবাণু বিস্তার লাভ করে থাকে। এ রোগ আক্রমনের ফলে কান্ড বা গোড়ার আক্রান্ত স্থানে এক বিশেষ ধরনের ক্ষতের সৃষ্টি হয়। ক্ষতস্থানটি গোলাকার ক্যালাস বেষ্টিত থাকে। আক্রান্ত স্থানের বাকল শুকিয়ে ঈষৎ কাল রং ধারণ করে। কিনারায় হতে ক্যালাস সৃষ্টি হয়ে পুনরায় স্বাভাবিক হতে থাকে। অনেক সময় ক্ষতের উপর ক্যালাস বৃদ্ধি অস্বাভাবিক হয়ে অল্প সময়ে আক্রান্ত অংশকে সম্পূর্ণ ঢেকে ফেলে কিন্তু রোগটি ভিতরে থেকে যায় ও ক্রমান্নয়ে বাড়তে থাকে। আক্রান্ত ডালপালাসমূহ দূর্বল হয়ে পড়ে এবং গাছটি মারা যায়।

প্রতিকারঃ এ রোগ দমনে ম্যাকুপ্রক্স ১৬ ডব্লিউ ২.২৪ কেজি হারে হেক্টর প্রতি ১০০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত কান্ডে বা শাখা প্রশাখায় স্প্রে করতে হবে। রোগ সংঘঠিত হওয়ার পূর্বে রোগ অনুকূল নিয়ামকসমূহের (ফ্যাক্টরগুলো) জরুরী ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। শিলায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় এবং প্রুণিত্তোর ২৪ ঘন্টার মধ্যে অনুমোদিত যে কোন একটা ছত্রাক নাশক ছিটাতে হবে। আক্রমণ তীব্র আকার ধারণ করলে আক্রান্ত স্থানের ৫ সেমি নিচে কিয়দাংশ অপসারণ পূর্বক কাটা স্থানে ছত্রাক নাশক এর পেষ্ট তৈরী করে ব্রাশ দ্বারা প্রলেপ দিতে হবে।

৮) কলার রট বা গোড়াপচা রোগ

রোগের লক্ষণঃ অরিণত গাছের গোড়ায় এ রোগের আক্রমণ লক্ষ্য করা যায়। আক্রমণে গাছ ঝিমিয়ে পড়ে, সত্বর পাতাগুলো বাদামী রং ধারণ করে এবং মাটির সমান্তরালে ১-২ সেমি উপরে বাকল ফেটে রিং আকারে উপরের দিকে উঠে যায়। ফলে গাছের গোড়া পেন্সিলের মতো সরু ও চিকণ হয়ে যায়।

প্রতিকারঃ এ রোগ দমনে হেক্টর প্রতি ২ লিটার হারে ফরমালডিহাইড যেমন- ফরমালিন (৪০%) অথবা ২.৮ কেজি হারে কপার অক্সিক্লোরাইড যেমন- এমিভিট ৫০ ডব্লিউপি ১০০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত গাছের গোড়ায় স্প্রে করতে হবে।

৯) চারকোল ষ্টাম্প রট বা অংগার রোগ

রোগের লক্ষণঃ বাংলাদেশ চায়ে গাছের গোড়া ও শিকড় রোগের মধ্যে চারকোল ষ্টাম্প রট রোগটিই প্রধান। গাছের গোড়া ও শিকড়ের মধ্যে Ustulina deusta নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। যে কোন বয়সের বা জাতের চা গাছ এবং ছায়া গাছকে এ জীবাণু আক্রমণ করতে পারে। গাছের গোড়া ও শিকড়ে এ রোগ আক্রামণ করে থাকে বিধায় রোগাক্রান্ত গাছ বাঁচানো খুবই কষ্টসাধ্য। সঠিক সময়ে দমনের ব্যবস্থা না নিলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আক্রান্ত গাছ মারা যায়। এ রোগ মাটি বাহিত বিধায় খুব দ্রুত আশে-পাশের গাছগুলোও আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এমনকি সমস্ত সেকশানটিই এর আক্রমণের কবলে পড়তে পারে। অত্যাধিক স্যাঁতস্যাতে আবহাওয়া, ছায়া ও অত্যধিক আর্দ্রতাযুক্ত পরিবেশ রোগের আক্রমনের প্রধান উৎস বলে বিবেচিত। বর্ষা মৌসুমের সময় বা পরে রোগের আক্রমন বেশী দেখা যায়। বালি মাটিতে এ রোগের তীব্রতা বেশী পরিলক্ষিত হয়। সাধারণতঃ এপ্রিল-মে মাস থেকে যখন আর্দ্র ও স্যাঁতস্যাতে আবহাওয়া বিরাজ করে তখন এই রোগের জীবানু সক্রিয় হয়ে উঠে। রোগাক্রান্ত গাছ এককভাবে অথবা বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি গাছ একই জায়গায় হঠাৎ করে মারা যায়। পাতা ঝলসে যায় এবং আস্তে আস্তে শুকিয়ে যায়। বাদামী-লাল রং এর ঝলসানো পাতাগুলো কিছুদিন ডালে লেগে থাকে এবং ডাল নাড়া দিলেও পাতাগুলো গাছ হতে ঝরে পড়ে না। আক্রান্ত গাছের গোড়ায় ও শিকড়ের উপর অসংখ্য ছোট ছোট কয়লার মত দানাদার গুটি দেখা যায়। ছত্রাকের ফ্রুকটিফিকেশন এবং আবরণ কয়লার ন্যায় দেখা যায় বিধায় এ রোগের নামকরণ চারকোল ষ্টাম্প রট করা হয়েছে। অনেক সময় শিকড়ের উপর ছত্রাকের বীজকণা পরিলক্ষিত হবার পূর্বেই গাছ মরে যেতে থাকে। আক্রমণ তীব্র হলে বাকলের নিচে ছত্রাকের মাইসেলিয়াম পরিদৃষ্ট হয়।

প্রতিকারঃ সঠিক সময়ে প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে না পারলে গাছ মারা যায় বিধায় আক্রমণের লক্ষণ পরিলক্ষিত হলেই প্রতিকার ব্যবস্থা করা অবশ্যই প্রয়োজন। প্রতিরোধক ব্যবস্থা হিসাবে চার পার্শ্বের এক সারি সুস্থগাছসহ আক্রান্ত এলাকার চতুর্দিকে ৩০ সেমি বা ১ ফুট চওড়া এবং ৩০ সেমি বা ৩ ফুট গভীর বিশিষ্ট গর্ত করে গাছকেগুলোকে পৃথকীকরণ করে পরবর্তীতে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়। সরাসরি ৪০% ফরমালিন প্রয়োগ করেও এ রোগ দমন করা যায়। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত গাছ ও তার চার পাশে অন্তত: দুই সারি সুস্থগাছে ৪০% ফরমালিন প্রয়োগ করতে হবে। এর জন্য প্রথমে কাঁটা কোদাল দিয়ে গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি ফরমালিন মিশ্রিত করে ঝাঁঝরির সাহায্যে আস্তে আস্তে গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করতে হবে। সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যে, কোন অবস্থাতেই যেন ফরমালিন মিশ্রিত পানি গাছের পাতায় না পড়ে। ফরমালিন প্রয়োগের পর গাছের গোড়া মালচিং করে দিতে হবে। ফরমালিন মিশ্রিত পানি মালচিং এর উপরও প্রয়োগ করা ভাল। সম্পূর্ণ মরাগাছ শিকড়সহ তুলে ফেলে দিতে হবে। ফরমালিন মিশ্রিত পানি প্রয়োগ করে গর্ত ভরাট করে দিতে হবে এবং পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। ৭ দিন পর পলিথিন সারিয়ে মাটিগুলো ঝুরঝুরে করে আরও ২ দিন অপেক্ষা করে (ফরমালিনের গ্যাস বিতাড়িত করার জন্য) নুতন চারা লাগানো যাবে।

১০) ভায়োলেট রুট রট রোগ

লক্ষণঃ জলাবদ্ধতার কারণে চা গাছের গোড়ায় এ রোগ দেখা দেয়। আক্রান্ত গাছের পাতাগুলো ধীরে ধীরে হলুদ হতে থাকে এবং নেতিয়ে পড়ে। অঙ্গার রোগের সাথে মূল পার্থক্য হচ্ছে পাতাগুলো হালকা নাড়ায় ঝরে পড়ে।

প্রতিকারঃ সঠিক সময়ে প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে না পারলে গাছ মারা যায় বিধায় আক্রমণের লক্ষণ পরিলক্ষিত হলেই প্রতিকার ব্যবস্থা করা অবশ্যই প্রয়োজন। প্রতিরোধক ব্যবস্থা হিসাবে চার পার্শ্বের এক সারি সুস্থগাছসহ আক্রান্ত এলাকার চতুর্দিকে ৩০ সেমি বা ১ ফুট চওড়া এবং ৩০ সেমি বা ৩ ফুট গভীর বিশিষ্ট গর্ত করে গাছকেগুলোকে পৃথকীকরণ করে পরবর্তীতে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়। সরাসরি ৪০% ফরমালিন প্রয়োগ করেও এ রোগ দমন করা যায়। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত গাছ ও তার চার পাশে অন্তত: দুই সারি সুস্থগাছে ৪০% ফরমালিন প্রয়োগ করতে হবে। এর জন্য প্রথমে কাঁটা কোদাল দিয়ে গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি ফরমালিন মিশ্রিত করে ঝাঁঝরির সাহায্যে আস্তে আস্তে গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করতে হবে। সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যে, কোন অবস্থাতেই যেন ফরমালিন মিশ্রিত পানি গাছের পাতায় না পড়ে। ফরমালিন প্রয়োগের পর গাছের গোড়া মালচিং করে দিতে হবে। ফরমালিন মিশ্রিত পানি মালচিং এর উপরও প্রয়োগ করা ভাল। সম্পূর্ণ মরাগাছ শিকড়সহ তুলে ফেলে দিতে হবে। ফরমালিন মিশ্রিত পানি প্রয়োগ করে গর্ত ভরাট করে দিতে হবে এবং পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। ৭ দিন পর পলিথিন সারিয়ে মাটিগুলো ঝুরঝুরে করে আরও ২ দিন অপেক্ষা করে (ফরমালিনের গ্যাস বিতাড়িত করার জন্য) নুতন চারা লাগানো যাবে।

চায়ের আগাছা দমন

চা আবাদীতে চা গাছ ও ছায়াতরু ব্যতীত অনাবশ্যক যে কোন গাছপালাকে আগাছা বলা যেতে পারে। গাছের সঠিক পুষ্টি ও বৃদ্ধির জন্য আগাছা দমন অপরিহার্য। কেননা আগাছা পানি ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের জন্য চা গাছের সঙ্গে প্রতিযোগীতা করে এবং প্রয়োজনীয় আলো বাতাসও ব্যাহত করে। তাছাড়া পোকামাকড় ও রোগবালাই বিস্তারে সহায়তা করে। সাধারণত নিড়ানী, কোদাল ও কাস্তের সাহায্যে আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এ পদ্ধতি ব্যয় বহুল, শ্রমনির্ভর ও কষ্টসাধ্য হলেও পরিবেশ বান্ধব। ভরামৌসুমে চায়ের বৃদ্ধি যখন ভাল হয়, পাশাপাশি চা আবাদীতে আগাছার আধিক্যও বৃদ্ধি পায়। তখন শ্রমিক স্বল্পতাহেতু নির্ধারিত মাত্রায় আগাছানাশক প্রয়োগের মাধ্যমে আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ এবং এটি অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে স্বল্প সময়ে বিস্তীর্ণ এলাকায় দ্রুত আগাছা দমন করা সম্ভব। তবে উঁচু টিলার উপরে বা খাড়া টিলার ঢালে কোন অবস্থাতেই আগাছানাশক প্রয়োগ করা উচিত নয়।

বাংলাদেশে চা আবাদীতে যে সকল আগাছাসমূহ জন্মে সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ এর সুবিধার্থে প্রধানত: দু’ভাগে ভাগ করা যায়। নরম ও অকাষ্ঠলগুলোকে এক-বীজপত্রী এবং শক্ত ও কাষ্ঠলগুলোকে দ্বি-বীজপত্রী আগাছা হিসাবে ভাগ করা হয়ে থাকে। চা আবাদীতে কোন কোন সেকশনে এক-বীজপত্রী এবং কোন কোন সেকশনে দ্বি-বীজপত্রী আগাছা জন্মিয়ে থাকে। আবার কোন কোন সেকশনে এক-বীজপত্রী ও দ্বি-বীজপত্রী উভয় প্রকার আগাছা জন্মিয়ে থাকে। কিছু আগাছা নাশক আছে শুধুমাত্র এক-বীজপত্রী জাতীয় আগাছাকে দমন করে কিন্তু দ্বি-বীজপত্রী আগাছার উপর কাজ করে না। অন্যদিকে কিছু আগাছা নাশক আছে শুধুমাত্র দ্বি-বীজপত্রী জাতীয় আগাছাকে দমন করে কিন্তু এক-বীজপত্রী আগাছার উপর কাজ করে না। আবার কিছু আগাছা নাশক আছে এক-বীজপত্রী ও দ্বি-বীজপত্রী উভয় জাতীয় আগাছাকে দমন করে থাকে। সব আগাছা নাশক সব আগাছা উপর কাজ করে না বিধায় আগাছা নাশক দ্বারা আগাছা দমন করতে গেলে সেকশনের আগাছার ধরণ তথা কোন্ জাতীয় আগাছা বিদ্যমান তা দেখে আগাছা নাশক ব্যবহার করা উচিত।

অন্যদিকে নার্সারীতে আগাছাসমূহ দমন কল্পে দু’ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়। (১) স্ট্যান্ডিং নার্সারীতে হাত বাছাই করে এবং (২) নার্সারীর বেডে (চারা লাগানোর পূর্বে) প্রি-ইমার্জেন্ট জাতীয় আগাছা নাশক প্রয়োগ করে।

এক-বীজপত্রী আগাছাসমূহ: দুর্বা ঘাস, ছন ঘাস, মুথা ঘাস, আঙ্গুলী ঘাস ইত্যাদি।
দ্বি-বীজপত্রী আগাছাসমূহ: বাগরাকোট, মিকানিয়ালতা, নিশি, লজ্জাবতী, ঘেটু, কুকর শুঙ্গা, ছোট দুধীয়া, বড় দুধীয়া, কলকা সন্ধা, বিষকাটালী, বন পটল, তেলা কুচি, শ্বেতদ্রোন, থানকুনী ইত্যাদি।

আগাছার দমনকৌশলঃ আগাছানাশক ও এদের হেক্টর প্রতি মাত্রা নিম্নে দেয়া হলোঃ

একবীজপত্রী ও দ্বিবীজপত্রী উভয় প্রকার আগাছা বিদ্যমান থাকলে গ্লাইফোসেট জাতীয় যেমন- রাউন্ডআপ, এমকোরাউন্ড, সানআপ, রিড উইড, বাই মাস্টার @ হেক্টর প্রতি ৩.৫ লি./ ৭৫০ লিটার পানি অথবা প্যারাকোয়াট জাতীয় যেমন- গ্রামোক্সোন, পিলারক্সন, প্যারাক্সোন @ হেক্টর প্রতি ২.৮ লি./ ৭৫০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ভালভাবে স্প্রে করতে হবে।

কেবলমাত্র এক-বীজপত্রী আগাছা বিদ্যমান থাকলে ডালাপন @ হেক্টর প্রতি ৬.৭২ কেজি./৭৫০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ভালভাবে স্প্রে করতে হবে।

কেবলমাত্র দ্বি-বীজপত্রী আগাছা বিদ্যমান থাকলে ২,৪-ডি জাতীয় যেমন- ২,৪-ডি, কেম এমাইন @ হেক্টর প্রতি ২.৮ কেজি./৭৫০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ভালভাবে স্প্রে করতে হবে।

Copyright © 2024 btbckaschool.com
Developed by Rebnal Global Limited