উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় দিন দিন বাড়ছে চায়ের আবাদ। অধিক লাভজনক বলে ক্ষুদ্র চাষিরাও বাড়ির আনাচে কানাচে গড়ে তুলছেন চা বাগান । বাংলাদেশে প্রথম ক্ষুদ্র চাষিদের উদ্যোগে চা চাষ শুরু হয় পঞ্চগড় জেলায়। নতুন ফসল বলে চাষিদের অভিজ্ঞতা ছিলো কম। এই দিকটি বিবেচনা করে ক্ষুদ্র চা চাষিদের চা চাষের নানা প্রক্রিয়া সমন্ধে হাতে কলমে প্রশিক্ষন দিচ্ছে বাংলাদেশ চা বোর্ড। চা চাষিদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য খোলা হয়েছে ‘ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুল’। চা বাগানের খোলা আকাশের নিচেই দেয়া হচ্ছে এই প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণ নিয়ে চা চাষে লাভবান হচ্ছেন ক্ষুদ্র চা চাষিরা।
১৯৯৬ সালে তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চগড় সফরে এসে সমতলে চা চাষের সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন। এরপর ২০০০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষুদ্র পর্যায়ে চা চাষ শুরু হয় এই জেলায় । দিন দিন চা চাষের ব্যাপকতা বাড়তে থাকে। চায়ের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যামেলিয়া। তাই ক্যামিলিয়া নামেই চা চাষীদের জন্য খোলা হয়েছে ‘ক্যামিলিয়া খোলা আকাশ স্কুল’। এই স্কুলে উত্তরবঙ্গের ক্ষুদ্র চা চাষিরা চায়ের গুণগত মান উন্নয়ন এবং চা চাষের নানা পদ্ধতির ওপর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। প্রকল্পটি শুরু হয়েছে ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে। বর্তমানে প্রতিসপ্তাহে বিভিন্ন গ্রামে চা বাগানের আশেপাশে খোলা মাঠে হাতেকলমে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে চা চাষিদের।
চা আবাদে পাতা চয়ন ও প্লুনিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কিভাবে সার প্রয়োগ করা যায়, চা পাতার উৎপাদন বৃদ্ধি সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন চা বোর্ডের অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকরা। ফলে দিন দিন চায়ের আবাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদনও বাড়ছে। ২০২০ সালে চা উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে উত্তর বঙ্গের এই চা অঞ্চল। করোনাকালীন সময়েও ২০২০ সালে দেশে ৮ কোটি ৬৪ লাখ কেজি তৈরী চা উৎপাদিত হয়। যার মধ্যে উত্তরের সমতল অঞ্চলেই উৎপাদিত হয় ১ কোটি ৩ লাখ কেজি। ২০২০ সালে সমতল অঞ্চলে চা উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ছিলো ৯৫ লাখ কেজী। ক্ষুদ্র চা চাষিরা বলছেন ক্যামিলিয়া খোলা আকাশ স্কুলে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা লাভবান হচ্ছেন । তাদের ক্ষুদ্র চা বাগানে বাড়ছে উৎপাদন। তেতুলিয়া উপজেলার শালবাহান এলাকার ক্ষুদ্র চা চাষি মাসুদ আল করিম জানান, পাঁচ একর চা বাগান করেছি। চা চাষে একেবারে নতুন। ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুলে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক সমৃদ্ধ হয়েছি । চায়ের উৎপাদন বেড়েছে।
বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্র বলছে, পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলায় দিন দিন বাড়ছে চায়ের আবাদ। ক্ষুদ্র চা চাষিদের আরও অভিজ্ঞ করে গড়ে তুলতে খোলা হয়েছে ক্যামিলিয়া খোলা আকাশ স্কুল।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, পঞ্চগড়ে প্রায় ৬ হাজার ক্ষুদ্র চা চাষি রয়েছেন । এর মধ্যে প্রায় তিন হাজার ক্ষুদ্র চাষিকে এই স্কুলের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ২০২১ সালে সমতল অঞ্চলে চা উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ১ কোটি কেজি। আশা করছি গতবারের মতো এবারও লক্ষ্য মাত্রা ছড়িয়ে যাবে চা উৎপাদন ।