1. rebnalhost@gmail.com : admin : Camellia Open Sky School
  2. fardinahmmedsami@gmail.com : Fardin Sami :

ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুল: দক্ষ চা চাষী তৈরির ভিন্নধর্মী উদ্যোগ

ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুল: দক্ষ চা চাষী তৈরির ভিন্নধর্মী উদ্যোগঃ

এই উদ্যেগের আওতায় পঞ্চগড়, দিনাজপুর লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও ও নীলফামারী জেলার ১ হাজার ৪৮২ জন নিবন্ধিত ও ৫ হাজার ৭৬ জন অনিবন্ধিত ক্ষুদ্র চা চাষীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে চা বোর্ড।

বাংলাদেশ চা বোর্ড দেশে দক্ষ চা চাষী তৈরির জন্য অভিন্ন এক উদ্যোগ নিয়েছে। তারা বলছে, এই উদ্যেগের ফলে চাষীরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চা আবাদী ব্যবস্থাপনা ও টেকসই-নিরাপদ চা উৎপাদন সম্পর্কে জানতে পারবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ৫০০ জন ক্ষুদ্র চা চাষীকে নিয়ে ‘ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুল’ উদ্যোগের প্রথম ধাপের যাত্রা শুরু হয়েছে চলতি বছরের অক্টোবর মাসে। আর এই উদ্যোগের আট ধাপের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গত কয়েকদিন আগে শেষ হয়েছে।

চা চাষীদের দোরগোড়ায় বিভিন্ন ধরনের সেবা পৌঁছে দিতে এই কার্যক্রম, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দীর্ঘ মেয়াদে চলমান থাকবে বলে জানা গেছে।

চা বোর্ডের একটি সূত্র দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলছে, এই কার্যক্রমের ফলে চা চাষীরা কাঁচা পাতার ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি, প্রয়োজনীয় কীটনাশক ব্যবহার, কম খরচে উৎপাদন ও গুণগতমান বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে।

এই উদ্যেগের আওতায় পঞ্চগড়, দিনাজপুর লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও ও নীলফামারী জেলার ১ হাজার ৪৮২ জন নিবন্ধিত ও ৫ হাজার ৭৬ জন অনিবন্ধিত ক্ষুদ্র চা চাষীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে চা বোর্ড।

‘ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুল’ সম্পর্কে জানা গেছে, এটি গতানুগতিক কোন স্কুল নয়, এটি চা বাগানের পাশে খোলা ময়দানে আকশের নিচে ক্ষুদ্র চা চাষীদের নিয়ে আয়োজিত একটি ছাদ ও দেয়াল বিহীন স্কুল।

এ স্কুলে চায়ের জাত নির্বাচন, নার্সারী তৈরি, চারা রোপন, পাতা চয়ন, প্রুনিং, সেচ ও পানি নিষ্কাশন, সার প্রয়োগ ও পোকামাকড়-রোগবালাই দমন ইত্যাদি সম্পর্কে ক্ষুদ্র চাষীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

এদিকে স্কুলের নামকরণ সম্পর্কে জানা গেছে-চায়ের উদ্ভিদতাত্ত্বিক বা বৈজ্ঞানিক নাম হলো ‘ক্যামেলিয়া সাইনেনসিস’। সেই নাম থেকে জেনাস অংশটুকু নিয়ে ‘ক্যামেলিয়া’ এবং দেয়াল ও ছাদ বিহীন স্কুলের নামে ‘খোলা আকাশ স্কুল’ নামকরণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ড কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘এক্সটেনশন অব স্মল হোল্ডিং টি কালটিভেশন ইন নর্দান বাংলাদেশ’ প্রকল্পের পরিচালক ও চা বোর্ডের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন ‘ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুল’ বাস্তবায়নে কাজ করছেন।

এই উদ্যেগের আওতায় চা বোর্ড-চাষীদের উপযোগী সিলেবাস তৈরি, বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ দিয়ে চাষীদের ক্লাস নেওয়া, প্রশিক্ষণ শেষে মূল্যায়ন, দুটি পাতা একটি কুঁড়ি মোবাইল অ্যাপ্সের ব্যবহার শেখানো ও অর্গানিক পদ্ধতিতে চা চাষ শেখানো হচ্ছে।

এ ছাড়াও বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) থেকে অভিজ্ঞ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিট (পিডিইউ) থেকে অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক নিয়োগ করে উন্নতর প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে।

এই উদ্যেগের পেছনের কার্যক্রম জানাতে গিয়ে চা বোর্ডের এক কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘শুরুতে এইসব অঞ্চলের বেশীরভাগ ক্ষুদ্র চা চাষীগণ চা চাষে অনভিজ্ঞ ছিল। তাই অনভিজ্ঞতা ও অদক্ষতার কারণে তারা তাদের ইচ্ছামতো চারা রোপন, পাতা চয়ন, প্রুনিং, সার প্রয়োগ ও পোকামাকড় দমন করে থাকতো। ফলশ্রুতিতে প্রায়শই তাদের চা বাগানে ভুল প্র্যাকটিস অনুসরণ করতে দেখা যেত।’

পঞ্চগড়ের আটওয়ারি উপজেলার সোনাপাতিলা গ্রামের চা চাষী মতিয়ার রহমান। দীর্ঘদির ধরে তিনি তার ৬০ একর জমিতে চা চাষ করছেন। তিনি চা বোর্ডের এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন। ‘উদ্যোগটি বেশ দারুণ। আগে আমরা প্রচলিত ধ্যান-ধারনার মধ্য দিয়েই চায়ের চাষ করতাম। এখন আমরা বৈজ্ঞানিক নিয়ম মেনে কাজ করি। এতে করে বেশ ভালো ফলও পাচ্ছি। এরকম উদ্যোগ আরো আগে নিলে আরো ভালো হতো। তবে দেরীতে হলেও চা বোর্ডকে এ ধরনের একটি উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ,’ বলেন তিনি।

এদিকে ‘ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুল’ এর কার্যক্রম লালমনিরহাট, পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহের শেরপুর ও জামালপুরে শুরু হয়েছে। এই স্কুলের মাধ্যমে পঞ্চগড়ে ১৮০ বান্দরবানে ৫৫, লালমনিরহাটে ৬০, ঠাকুরগাঁওয়ে ১২০, নীলফামারিতে ৫৫, দিনাজপুরে ৬০, শেরপুর ৪৫ ও জামালপুরে ৬০ জন চাষীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।

নর্দান প্রকল্পের পরিচালক ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের জন্য ক্ষুদ্রায়তন চা চাষীদের নিজস্ব বাগানের আঙ্গিনা সবচেয়ে কার্যকরী ও উপযুক্ত স্থান। ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ ফ্রেমের স্কুলটি চা বাগান সংলগ্ন অংশের স্থানটিকেই নির্বাচন করে থাকে প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য। যাতে করে কৃষকদের দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে চা বোর্ডের আঞ্চলিক কার্যালয় কিংবা অফিসে আসতে না হয়।’

তিনি বলেন, ‘এ স্কুল পরিচালনার জন্য অনেক ক্ষেত্রে পঞ্চগড়, লালমনিরহাট ও বান্দরবানের অফিস স্থানীয় চাষীদের মধ্য থেকে অপেক্ষাকৃত বেশী সাফল্য অর্জনকারী চাষীদের স্কুল পরিচালনার জন্য উদ্বুদ্ধ করে থাকি। অনেক ক্ষেত্রে কয়েকটি বাগান নিয়ে ক্লাষ্টার করেও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছি।’

বর্তমানে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলার ৯টি নিবন্ধিত ও ১৮টি অনিবন্ধিত চা বাগান এবং ৬,৫৫৮টি ক্ষুদ্রায়তন চা বাগানে ৮৬৮০ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। গত বছরে এ অঞ্চল থকে ৯.৬ মিলিয়ন কেজি (দেশের ১০ শতাংশ) চা উৎপাদিত হয়েছে।

এদিকে চলতি মৌসুমের অক্টোবর পর্যন্ত ৮.৮ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। যা বছর শেষে ১০.০ মিলিয়ন (১ কোটি) কেজি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন চা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

https://www.tbsnews.net/bangla

Copyright © 2022 btbckaschool.com
Developed by Rebnal Global Limited