ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন
প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট
ও
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক
ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুল।
কৃষিবিদ ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের ১ জুলাই টাংগাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯৪ সালে ঘাটাইল গণ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ১৯৯৬ সালে ঘাটাইল ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। তিনি ২০০১ খ্রি. বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে বিএসসিএজি (অনার্স) এবং ২০০৫ খ্রি. কীটতত্ত্ব বিষয়ে ১ম শ্রেণীতে এমএস ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ২০১০ খ্রী. কলম্বো প্লান স্কলারশিপের আওতায় ভারতের তামিলনাডুস্থ কোথারী এগ্রিকালচারাল ম্যানেজমেন্ট সেন্টার হতে গ্রেড এ+ সহ ‘টি প্লান্টেশন ম্যানেজমেন্ট’ এ পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা (পিজিডি) ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ২০১৭ সালে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টি টেকনোলজি বিভাগ হতে ‘বাংলাদেশে চায়ের লালমাকড় নিয়ন্ত্রনে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন’ শিরোনামে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট এর স্কলারশিপের আওতায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসেবে প্রেষণে কর্তব্যরত আছেন।
তিনি ২০০৭ খ্রীস্টাব্দের ৩০ জুলাই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ চা বোর্ডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান শ্রীমঙ্গলস্থ বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (কীটতত্ত্ব) পদে যোগদান করেন। অতঃপর তিনি ২০১৩ খ্রীস্টাব্দের ২০ মার্চ ঊর্ধবতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (কীটতত্ত্ব) পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন এবং তিনি ২০২২ খ্রীস্টাব্দের ১৬ আগস্ট প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (কীটতত্ত্ব) পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন ও কীটতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০১৬ সালে চীন সরকারের অর্থায়নে চীনের ফুজিয়ানের জ্যাংজু কলেজ অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি থেকে ‘পলিউশন ফ্রি টি প্রোডাকশন টেকনোলজি’ এর উপর বিশেষ উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হন। ২০১৭ সালের ১৩ মার্চ হতে ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ খ্রি তারিখ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ চা বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, পঞ্চগড় উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়াও ২০১৭-২০১৮ মেয়াদে তিনি ইউএসএআইডি (USAID) অর্থায়নে বিএআরসি’র এনএটিপি ফেজ-২ এর আওতায় ‘টেকসই চা উৎপাদনে চায়ের ক্ষতিকর পোকামাকড়ের সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (আইপিএম)’ প্রকল্পের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর (পিআই) এর দায়িত্ব পালন করেছেন। সে সময়ে তিনি পঞ্চগড়স্থ বাংলাদেশ চা বোর্ড আঞ্চলিক কার্যালয়ে ১টি পেস্ট ম্যানেজমেন্ট ল্যাবরেটরী ও ১টি আইপিএম ফিল্ড ল্যাবরেটরী স্থাপন করেন। এছাড়াও তিনি ২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর হতে ৩০ জুন ২০২১ খ্রি. তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশ চা বোর্ড কর্তৃক বাস্তবায়িত “এক্সটেনশন অব স্মল হোল্ডিং টি কালটিভেশন ইন নর্দান বাংলাদেশ” শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন ও প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করেন। পোকামাকড়ের বায়ো-ইকোলজি, শস্য ক্ষতি মাত্রা নির্ধারণ, বায়োএসে ও পোকামাকড়ের রেজিস্ট্যান্স, চায়ের কীটনাশকের মাত্রা নির্ধারন, চায়ের সমন্বিত পোকা দমন ব্যবস্থাপনা, জৈব-কীটনাশক ও জৈব-দমন ব্যবস্থা এবং তৈরি চায়ে কীটনাশকের রেসিডিউ বিশ্লেষণ তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র। চায়ের কীটতাত্ত্বিক গবেষণাসমুহের পরিকল্পনা, তৈরি, পরিচালনা ও নির্দেশনা এবং তৈরি চায়ে কীটনাশকের রেসিডিউ বিশ্লেষণ তাঁর বিশেষায়িত যোগ্যতা।
জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত তাঁর ১১৬টি প্রবন্ধের মধ্যে ৪৯টি জার্ণালে গবেষণা প্রবন্ধ, ১৫টি কনফারেন্স পেপার, ৯টি এবস্ট্রাক্ট, ১০টি বৈজ্ঞানিক সার্কুলার, ১৩টি পপুলার আর্টিকেল, ৭টি অনলাইন আর্টিকেল, ৮টি টেকনিক্যাল/স্টাডি রিপোর্ট/বুলেটিন ও ৫টি বই/অধ্যায় রয়েছে। তাছাড়া তিনি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায়ও কৃষি বিষয়ক লেখা লিখে থাকেন। তিনি জার্মানের ‘ল্যাম্বার্ট একাডেমিক পাবলিশিং’ হতে প্রকাশিত পোকামাকড়ে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার উপর ২টি বই ও বিশ্ব বিখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুরের স্প্রিঞ্জার নেচার পাবলিশিং হতে প্রকাশিত “এগ্রোনমিক ক্রপ্স” বইয়ের চা বিষয়ক অধ্যায় “টি প্রোডাকশন ইন বাংলাদেশঃ ফ্রম বুশ টু মগ” এবং যুক্তরাষ্ট্রের এলসিভিয়ার এর একাডেমিক প্রেস হতে প্রকাশিত “নেমাটোড ডিজিজ এন্ড দেয়ার সাসটেইনেবল ম্যানেজমেন্ট” বই এর “নেমাটোড প্রবলেম ইন টি এন্ড দেয়ার সাসটেইনেবল ম্যানেজমেন্ট” অধ্যায় এর লেখক। তাঁর লেখা বাংলা ভাষায় “সমতলের চা শিল্প” ইতোমধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাঁর লেখা একটি বই আন্তর্জাতিকভাবে বহুল প্রচারের জন্য ৭টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। দেশে বিদেশে বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত তাঁর অর্ধশতাধিক গবেষণা প্রবন্ধের গুগল স্কলার সাইটেশন ৫৪৯। তিনি দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রশিক্ষন গ্রহণ করেছেন। ড. শামীম আল মামুন ৭১টি দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন কনফারেন্স, সেমিনার, কর্মশালা ও সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ ও গবেষণালব্দ বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। তিনি ২০০৯ সালে ভারতের তামিলনাডুতে বিভিন্ন চা বাগান, ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান, বটলিফ টি ফ্যাক্টরী ও উপাসি টি রিসার্স ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেন। তিনি ২০১৬ সালে চীনের ফুজিয়ান প্রদেশের চা বাগান, চা কারখানা, টি কালচার, টি মিউজিয়াম ও টি ফুড প্রসেসিং ইউনিট পরিদর্শন করেন এবং ‘টি মাস্টার’ সনদ অর্জন করেন। তিনি ২০১৯ সালে বাংলাদেশ চা বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ মুস্তাহিদুর রহমান, এনডিসি, পিএসসি এর সফরসঙ্গী হিসেবে ইন্দোনেশিয়া চা বোর্ড, ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান, বটলিফ টি ফ্যাক্টরী, ইন্দোনেশিয়া টি এন্ড সিনকোনা রিসার্স ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেন। তিনি ২০২৪ সালে প্রকাশিত এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্স এ বিশ্বসেরা বিজ্ঞানীদের তালিকায় প্রথমবারের মতো স্থান পেয়েছে।
‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে চা শিল্পের উন্নয়নে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’ মোবাইল অ্যাপ, ‘ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুল’, ‘আঠালো হলুদ ফাঁদ’, ‘সমতলের চা শিল্প’ মোবাইল অ্যাপ, ‘টি সফট’ সফটওয়্যার/মোবাইল অ্যাপ তাঁর বিশেষায়িত উদ্ভাবন (ইনোভেশন)। বাংলাদেশের চা শিল্পের উন্নয়নে তাঁর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পেশাগত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তিনি নিরাপদ ও টেকসই চা উৎপাদনে উদ্ভাবন করেছেন ‘চায়ের আইপিএম প্রযুক্তি’। চায়ের অন্যতম ক্ষতিকারক পোকা থ্রিপস-সহ অন্যান্য পোকাদমনে তাঁর উদ্ভাবিত আইপিএম প্রযুক্তির ‘আঠালো হলুদ ফাঁদ’ ইতোমধ্যে চা বাগানসমূহে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তাঁর উদ্ভাবিত গবেষণালব্দ ‘চায়ের আইপিএম প্রযুক্তি’ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল কর্তৃক মুজিব শতবর্ষে প্রকাশিত “১০০ কৃষি প্রযুক্তি এটলাস” বইটিতে এ স্থান পেয়েছে। তিনি ২০২২-২৩ অর্থবছরে দাপ্তরিক কর্মসম্পাদনে সর্বোত্তম নিষ্ঠা, সততা, দায়িত্বশীলতা, দক্ষতা ও শুদ্ধাচার চর্চার শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ “জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কার” এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে “শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবন পুরস্কার” প্রাপ্ত হন।
গবেষণার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন বিদেশি জার্নালের রিভিউয়ার ও এডিটরের কাজ করে থাকেন। ইতোমধ্যে তাঁর কো-তত্ত্বাবধানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষার্থী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর গবেষণা/থিসিসের কাজ সম্পন্ন করেছেন। তিনি দেশীয় ও আর্ন্তজাতিক বিভিন্ন পেশাজীবি সংস্থা ও সংগঠন যেমন- কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কীটতত্ত্ব সমিতি, বাংলাদেশ আগাছা বিজ্ঞান সমিতি, আমেরিকান কীটতত্ত্ব সমিতি, ইরানের মাকড়তত্ত্ব সমিতি, বাংলাদেশ প্রাণীবিজ্ঞান সমিতি, বাংলাদেশ উদ্ভিদবিজ্ঞান সমিতি, বাংলাদেশীয় চা পেশাজীবি কল্যাণ সংস্থা, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ফর দ্যা এডভান্সমেন্ট সায়েন্স ও এশিয়ান কাউন্সিল অব সায়েন্স এডিটর এর অন্যতম সদস্য। এছাড়াও তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রাম, কৃষি মন্ত্রনালয়ের বালাইনাশক কারিগরি উপ-কমিটি, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের বিভিন্ন কমিটির ফোকাল পয়েন্ট ও সদস্য। আধুনিক পেস্ট ব্যবস্থাপনায় চা শিল্পে তাঁর ভুমিকা অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের চায়ের পোকামাকড় নিয়ন্ত্রনে টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও তা সরেজমিনে ব্যবহার করাই তাঁর প্রধান কর্মক্ষেত্র। তিনি পেস্ট ব্যবস্থাপনার ফলিত দিক ও প্রযুক্তিসমূহ বাগান পরিদর্শন, ওয়ার্কশপ, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে চা বাগানগুলোকে পৌছে দিয়ে থাকেন। যার সুফল চা বাগানগুলোও পাচ্ছে। তিনি বাগান মালিক, ব্যবস্থাপক, ক্ষুদ্র চা চাষি সকলের নিকট অতিপরিচিত এবং সফল চা বিজ্ঞানী ও গবেষক হিসেবে সমাদৃত।
ব্যক্তিজীবনে তিনি একজন সৎ, সদালাপী, আন্তরিক, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, বন্ধুবৎসল ও সামাজিক মানুষ। তিনি বিবাহিত ও দুই কন্যা সন্তানের জনক।